Answer

ছয়দফা আন্দোলনের পটভূমি বা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে যা জান লিখ।

অথবা, ছয়দফা আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ছয়দফা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ছয়দফা আন্দোলনের পটভূমি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বেনিয়াদের হাতে চলে যায়। এ বেনিয়া শ্রেণি ভারতবর্ষে প্রায় দুইশত বছর তাদের আধিপত্য বজায় রাখেন। বাঙালিরা বেনিয়াদের শোষণ নির্যাতন থেকে মুক্ত হন ১৯৪৭ সালে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর বাঙালিরা আবার পতিত হন পশ্চিমা শাসক চক্রের রোষানলে। পশ্চিমা শাসক চক্রের রোষানল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য একের পর এক কর্মসূচি ও আন্দোলনের ডাক দেন। ফলে বিভিন্নভাবে বাঙালিরা প্রতিবাদ করেন। তেমনি প্রতিবাদ হলো একটি ১৯৬৬ সালের শেখ মুজিবের ছয়দফা। ছয় দফাকে তুলনা করা হয় ফরাসি বিপ্লবের ফল। যেমন- সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যেমন ম্যাগনাকার্টা, আমেরিকার ইতিহাসে যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধ ইত্যাদির সাথে ছয়দফা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্ব দিক নির্ধারণী সূত্র। ১৯৬৬ সালের ছয়দফার
পটভূমি বা প্রেক্ষাপট : ১৯৪৭ সালে ভারত শাসন আইন এর মাধ্যমে বাঙালিরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্ত হন। কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্ত হলেও বাঙালিরা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণে পরিণত হয়। পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী প্রথম বাঙালিদের ভাষা সংস্কৃতির উপর আঘাত হানেন। কিন্তু বাঙালিরা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার হয়। বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকে যুক্তফ্রন্টকে ‘৫৪ সালের নির্বাচনে জয়যুক্ত করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বেশিদিন টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়। ফলে বাঙালিদের উপর নেমে আসে কালের মহাগ্ৰাস। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী কায়েম করে দুই পাকিস্তানের মধ্যে পাহাড়সম বৈষম্য। এ বৈষম্য বিরাজমান ছিল সবখানে। চাকরি, কৃষি, শিল্প, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে ছিল বিস্তর বৈষম্য। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখা যায় পূর্ব পাকিস্তানে কাঁচামাল উৎপন্ন হতো আর সে কাঁচামালে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছিল। কলকারখানায় উৎপন্ন পণ্য বাঙালিরা উচ্চমূল্যে ক্রয় করত। এতে লাভবান হতো পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিরা। এটাই ছিল শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ। অফিস আদালতের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়- সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদরদপ্তর- ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। এভাবে দেখা যায়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সুকৌশলে পশ্চিমা মহলের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। তাই পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষাকবচ ছিল তাদের হাতে। তাই ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান তার বিখ্যাত ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন (১৯৬৬/১৩ ফেব্রুয়ারি) যা ইতিহাসে বিখ্যাত ছয় দফা প্রস্তাব নামে খ্যাত ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের প্রতি যে সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি করে, সেখানে ৬ দফা কর্মসূচি ছিল এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। এ ৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত ও নির্যাতিত জনগণেরনিকট তাদের ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তি সনদরূপে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন লাভ করে ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!