গ্রিনহাউস ইফেক্ট কী?

অথবা, গ্রিন হাউস ইফেক্ট কাকে বলে?
অথবা, গ্রিন হাউস ইফেক্ট বলতে কী বুঝ?
অথবা, গ্রিন হাউস ইফেক্ট-এর সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
শিল্পায়ন ও নগরায়ণ মানবজীবনে বিভিন্ন ধরনের সুখ ও সমৃদ্ধি আনয়ন করলেও পাশাপাশি ডেকে এনেছে কিছু পরিবেশগত বিপর্যয়, যা মানবসভ্যতাসহ সমগ্র প্রাণিকুলের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। গ্রিন হাউস ইফেক্ট’ এসব মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এর ফলে বাংলাদেশের সমগ্র উপকূলবর্তী অনেকগুলো দেশ আগামী ৩০-৫০ বছরের মধ্যে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া : পৃথিবীর সব অঞ্চলে সূর্য সমানভাবে তাপ দেয় না। মেরু অঞ্চলে সূর্যের আলো তীর্যকভাবে পড়ে! তাই সেখানের সূর্যালোকের তেজ তেমন একটা নেই। ফলে মেরু অঞ্চল পৃথিবীর অন্য অঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা, যেখানে তাপমাত্রা সব সময় হিমাঙ্কের নীচে থাকে। মেরু অঞ্চলের এ কম তাপমাত্রায় গাছপালার জন্ম ও বংশবিস্তার আদৌ সহায়ক নয়। তাই অনেকেই সেখানে কৃত্রিমভাবে গাছপালা জন্মিয়ে থাকে। যে কৃত্রিম ব্যবস্থায় সবুজ গাছপালা জন্মানো হয়, তাকে গ্রিন হাউস বলে। কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য যে গ্রিন হাউস বা সবুজ ঘর ব্যবহার করা হয় তা আসলে একটা কাচের ব্যবস্থা মাত্র। কাচের এ ঘরে সূর্যর তাপ আটকিয়ে ভিতরটা গরম রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সৌররশ্মি স্বচ্ছ কাচের ভিতর দিয়ে সরাসরি অপরিবর্তিতভাবেই ঢুকে পড়ে এবং কাচের দেওয়াল উত্তপ্ত হয়ে উঠে । উত্তপ্ত কাচের দেওয়াল থেকে বেশি দৈর্ঘ্যের তরঙ্গগুলো বিকরিত হয়ে কাচের দেওয়ালে বারবার প্রতিফলিত হয় এবং আর বের হতে পারে না। ফলে যতক্ষণ সূর্যের আলো পাওয়া যায়, ততক্ষণ তার রশ্মিগুলো কাচের ঘরে আটকা পড়ে ভিতরটা উত্তপ্ত করতে থাকে। তবে সবুজ ঘরেই এ তাপমাত্রা অনির্দিষ্ট মাত্রায় বাড়ে না। নানাভাবে কিছু তাপ হারিয়ে যায়, যাই হোক, সবুজ ঘরের অভ্যন্তরে এভাবে তাপমাত্রা বাড়ার নামই হচ্ছে গ্রিন হাউস ইফেক্ট। সাম্প্রতিককালে সারা দুনিয়াকে ভাবিয়ে তোলা গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া বিষয়টিকে কাচের তৈরি সে সবুজ ঘরের ধারণা থেকেই নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেছেন, বিশ্বে বর্তমান তাপমাত্রার বৃদ্ধি এ গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ারই ফল, যা পৃথিবীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের উপর মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো এসে আমাদের পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে। আর রাতের বেলায় এ তাপ বিকিরিত হয়ে শূন্যে হারিয়ে যায়। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র তাপমাত্রা একটা সাম্যাবস্থায় বিরাজ করে। এ সাম্য উচ্চতার উপযোগী উদ্ভিদ ও ফসল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় জন্মে থাকে। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে, বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগেই কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO2) আবরণটি ঠিক সবুজ ঘরে কাচের বেষ্টনীর মতো আচরণ শুরু করেছে। সৌর তাপরশ্মি দিনের বেলায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। কিন্তু রাতের বেলায় দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিগুলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দিনের পর দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া নামে যা পরিচিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়াকে গ্রিন হাউস ইফেক্ট বলে। বায়ুমণ্ডলে CFC, CO2, CH4 ও N2O প্রভৃতি গ্যাস দ্বারা স্তর সৃষ্টি হওয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে তাপ আটক পড়ে এবং সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে যে প্রভাব পড়ে তাই গ্রিন হাউস ইফেক্ট।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*