Answer

গ্রামীণ অর্থনীতি কাকে বলে? বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো আলোচনা কর ।

অথবা, গ্রামীণ অর্থনীতি কী? বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো ব্যাখ্যা কর।
অথবা, গ্রামীণ অর্থনীতি বলতে কী বুঝ? বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো বিশ্লেষণ
উত্তর৷ ভূমিকা :
অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটি বিষয়, যা জাতিসমূহের সম্পদের প্রবৃদ্ধি ও কারণ অনুসন্ধান করে। অন্যভাবে বলা যায়, সম্পদের উৎপাদন ও তা বণ্টনের ব্যবহারিক বিজ্ঞানই হলো অর্থনীতি। আর এ অর্থনীতির বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোর ভিত্তিকে যে দু’ভাগে ভাগ করা হয় গ্রামীণ অর্থনীতি তার মধ্যে অন্যতম। বস্তুত গ্রামে উদ্ভাবিত ও
বিকশিত কৃষিব্যবস্থাই, এ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ।
গ্রামীণ অর্থনীতি (Rural economy) : গ্রামকে কেন্দ্র করে পরিচালিত অর্থনৈতিক কার্যাবলিকেই গ্রামীণ অর্থনীতি বলা হয়। এ অর্থনীতিতে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ব্যবস্থা ও তার সমস্যা, গ্রামীণ জনগণের আয়, ভোগ, সঞ্চয় ইত্যাদির প্রকৃতি বিনিয়োগের ধরন, কর্মসংস্থান, সম্পদের বণ্টন, দারিদ্র্যের মাত্রা, অবকাঠামোগত সমস্যা ইত্যাদি আলোচনায় স্থান পায় । গ্রামীণ অর্থনীতির মাধ্যমে আমরা তাই গ্রামের জনগণের অর্থনৈতিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র লাভ করি। বাংলাদেশ একটি গ্রামপ্রধান দেশ। কৃষি এদেশের অর্থনীতের মূলভিত্তি। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি তথা জাতীয় অর্থনীতি কৃষি ও কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষির নিম্ন উৎপাদনশীলতা, কুটির শিল্পের অনুন্নয়ন, বেকারত্ব, ভূমির ত্রুটিপূর্ণ বণ্টন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা প্রভৃতি বহু সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের উপর দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। গ্রামীণ অর্থনীতির আওতায় এসব গ্রামীণ সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো হয়। তাই এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিকাশের সাথে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো (Structure of rural economy of bangladesh) : গ্রামে সংঘটিত বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে নিয়েই বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো গঠিত। এ কার্যাবলির মধ্যে কৃষিই প্রধান বলে কৃষিকে এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু বলা যায়। তাই কৃষি ও কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের রূপরেখাকে নিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো রচিত । নিম্নে এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. কৃষিজমির অসমবণ্টন : কৃষি গ্রামীণ অর্থনীতির মূলভিত্তি হলেও কৃষিকার্যের প্রধান উপাদান জমির বণ্টনের ক্ষেত্রে দারুণ বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এখানে ধনী বা উদ্বৃত্ত কৃষক, মধ্যবিত্ত কৃষক, ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষক পাশাপাশি অবস্থান করে। অথচ এদের মধ্যে কৃষিজমির অসমবণ্টন লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং, বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিজমির মালিকানার অসমতা অত্যন্ত প্রকট এবং তা শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অনুকূল নয়।
২. কৃষি বহির্ভূত পেশা : এদেশের গ্রামীণ জনসংখ্যার কিছু অংশ কৃষি বহির্ভূত পেশায় নিয়োজিত। পেশার ভিত্তিতে এরা কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, ধোপা, মুচি, কলু, স্বর্ণকার ইত্যাদি শ্রেণিতে বিভক্ত এর স্ব-স্ব পেশায় কুটির শিল্পের সাথে জড়িত। উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলেও গ্রাম্য দক্ষতা বলয়ে এদের কোন প্রভাব নেই।
৩. গ্রাম্য মহাজন আধুনিককালে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো গ্রাম্য মহাজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : গ্রাম্য মহাজনরা উচ্চ হারে সুদে জমি বন্ধকীর বিনিময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের ঋণ প্রদান করে। ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ কৃষকদের বন্ধকি জমিজমা তারা হস্তগত করে।
৪. প্রাচীন ও ত্রুটিপূর্ণ কৃষিব্যবস্থা : আমীণ অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক হলেও কৃষিব্যবস্থা সেকেলে, অনুন্নত ও অভ্যস্ত ত্রুটিপূর্ণ। ফলস্বরূপ এখানে একর প্রতিফলন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।
৫. স্বল্প আয় ও নিম্ন জীবনযাত্রার মান :কৃষি কিংবা কুটিরশিল্পের স্বল্প উৎপাদনের কারণে কৃষকসহ অন্যান্য পেশাজীবী লোকদের আয় খুব কম এবং জীবনযাত্রার মান অতি নিম্ন। কিছু বিত্তশালী কৃষক, গ্রাম্য মহাজন ও ব্যবসায়ী বাদে গ্রামের অধিকাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
৬. ব্যবসায়ী সম্প্রদায় : আধুনিককালে বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামোতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রামের ছোট ছোট দোকানদার, মজুতদার, কাপড় বিক্রেতা ইত্যাদি হলো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।
৭. সামান্য সঞ্চয় ও স্বল্প বিনিয়োগ : গ্রামাঞ্চলের লোকদের আয় খুব কম বলে সঞ্চয়ের পরিমাণও খুব কম। কম সঞ্চয়ের কারণে মূলধন গঠনের হারও খুব কম। সহজ শর্তে প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষিঋণ প্রাপ্তির সুযোগও অত্যন্ত সীমিত। গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতি মূলধন বিনিয়োগের অভাবে তাই অনগ্রসর ও স্বল্প উৎপাদনক্ষম।
৮. দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক বুনিয়াদ : আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর দুর্বল অর্থনৈতিক ও সমাজিক বুনিয়াদ। আমাঞ্চলে রাস্তাঘাট, পয়ঃপ্রণালি, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদির একান্ত অভাব রয়েছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ও উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
৯. অনুন্নত মানব সম্পদ : বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনুন্নত মানব সম্পদ লক্ষ্য করা যায়। মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার অভাব, চিকিৎসার অভাব, পুষ্টিমানের অভাব প্রভৃতি কারণে তাদের যথার্থ উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। এ কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে অনুন্নত মানব সম্পদে পরিণত হয়।
১০. মূলধনের স্বল্পতা : বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে মূলধনের স্বল্পতা লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু গ্রামাঞ্চলে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রসার এখন যথেষ্ট নয় এবং গ্রামীণ দরিদ্র কৃষক শ্রেণি জামানতের অভাবে প্রয়োজনমতো ঋণ পায় না। সেহেতু এ অঞ্চলের মূলধন বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগী হওয়া সম্ভবপর হয় না।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, কৃষি বহির্ভূত অন্যান্য পেশা, বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অন্যান্য শ্রেণির দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রভৃতির সমন্বয়ে মূলতnবাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো গঠিত। আর্থিক দিক থেকে আমাদের সমগ্র গ্রামীণ অর্থনীতি স্বল্প আয় ও নিম্ন জীবনযাত্রার বৃত্তেnআবদ্ধ। এছাড়া সামাজিক ক্ষেত্রে রয়েছে পশ্চাৎপদ ও প্রতিকূল পরিবেশ। তবে বিগত প্রায় এক দশককাল যাবৎ বাংলাদেশে পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রচেষ্টার আওতায় পল্লিউন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকাণ্ড ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছে। এর ফলে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!