পল্লি উন্নয়নের সূচক (Para meter) গুলো আলোচনা কর ।

অথবা, কোন কোন সূচকের আলোকে পল্লিউন্নয়নকে চিহ্নিত করা যায়? আলোচনা কর।
অথবা, পল্লি উন্নয়নের সূচক বা মাত্রা বর্ণনা কর।
অথবা, পল্লি উন্নয়নের সূচকগুলো তুলে ধর।
অথবা, পল্লি উন্নয়নের সূচক বা মাত্রার ব্যাখ্যা দাও।
অথবা, পল্লি উন্নয়নের সূচকসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
“A policy of rural development is a policy of national development.” -Julias Nyrer,
উন্নয়ন সম্পর্কিত ধারণার ক্ষেত্রে পল্লিউন্নয়ন (Rural development) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
কারণ পল্লিউন্নয়ন ব্যতিরেকে জাতীয় উন্নয়ন অসম্ভব। একটি দেশের মৌলিক চাহিদা বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা,বাসস্থান, শিক্ষা প্রভৃতির নিশ্চয়তা বিধানে পল্লি উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। কারণ দেশের সিংহভাগ লোক বাস করে পল্লির প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাংলাদেশের ৪৫% লোক গ্রামে বসবাস করে এবং ৮০% লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। তাই এখানে পল্লিকে বাদ দিয়ে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়।
পল্লি উন্নয়নের সূচক বা মাত্রা : পল্লি উন্নয়নের লক্ষ্যে পল্লির জনগণের জীবনধারণ প্রক্রিয়াতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, যখন নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে তখনই পল্লিউন্নয়ন সম্ভব :
১. কৃষি উন্নয়ন : পল্লি উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৃষির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত শস্য,বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণ প্রভৃতির যথাযথ সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত উৎপাদন পদ্ধতির প্রচলন ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সমবায়ের ভিত্তিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবেই পল্লিউন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে।
২. কুটিরশিল্পের প্রসারণ : কুটিরশিল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা সম্ভব। যেমন— তাঁতশিল্প, বস্ত্রশিল্প, কামার, কুমার, জেলে, মৃৎশিল্প প্রভৃতির উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি প্রদান করা যেতে পারে। এরা যখন স্বাবলম্বী হবে তখন পল্লির আর্থসামাজিক কাঠামো শক্তিশালী হতে বাধ্য। তাই কুটির শিল্পের সম্প্রসারণ একান্ত প্রয়োজন।
৩. শিল্পোন্নয়ন : কৃষির পাশাপাশি গ্রামীণ শিল্পখাত গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। এখানে বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ, পশুপালন, হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য চাষের উপর ভিত্তি করে যেসব শিল্প স্থাপন করা যেতে পারে তার মধ্যে কৃষিজ কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, পশুখাদ্য, হাঁস-মুরগির খাদ্য, পশুর বর্জ্য থেকে সার তৈরি, জুতার কারখানা,বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র, মৃৎশিল্প প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে পল্লিউন্নয়ন করা যেতে পারে।
৪. গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন : এদেশের গ্রামে অসম আর্থসামাজিক সুবিধাভোগী কাঠামোর অস্তিত্ব বিদ্যমান। এদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো একরকম বৃহৎ কৃষক, মধ্যম কৃষক, ক্ষুদ্র কৃষক, প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষক,প্রথম শ্রেণির ১০%, ২য় শ্রেণির ২০% এবং অন্যান্য ৭০%। গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য এগুলোর সমতা আনয়ন প্রয়োজন।এখানে শতকরা ৮০% সম্পদ মাত্র ২০% লোক ভোগ করে এবং বাকি ২০% সম্পদ ৮০% লোক ভোগ করে, যা অসম বণ্টনের প্রমাণ। তাই গ্রামীণ উন্নয়নে সমবণ্টন অপরিহার্য।
৫. গৃহপালিত পশুপালন : গৃহপালিত পশুপালন তথা হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, মাছের খামার, গরু ছাগল পালন প্রভৃতি পল্লি উন্নয়নের সাথে জড়িত। এগুলোর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। বেকার সমস্যার লাঘব হয়। যুব ও নারীসমাজের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরে আসে। তাই পল্লি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা অপরিহার্য।
৬. কর্মসংস্থানের সুযোগ : গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।কারণ এরা মূলত কর্মসংস্থানের অভাবে গ্রাম থেকে শহরে গমন (Rural urban migration) করছে। তাই গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে পল্লিউন্নয়ন সম্ভব নয়।
৭. গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা : গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনও শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই তারা এখনো অসচেতন ও অন্ধকারের মধ্যে অবস্থান করছে। ফলে পল্লিউন্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই পল্লি উন্নয়নের ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা অপরিহার্য । তা না হলে তারা তাদের ক্ষমতা,পদমর্যাদা, অধিকার, দায়িত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে অসচেতন রয়ে যাচ্ছে ।
৮. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ : স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চাহিদা সম্পর্কে স্থানীয় জনগণই অধিকতর অবগত । এজন্য যে কোনো গ্রাম উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে স্বীয় অঞ্চলের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অপরিহার্য।উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, তত্ত্বাবধান, মূল্যায়ন প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
৯. জনগণের আয় বৃদ্ধি : স্থানীয় জনগণকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তারা এ আয় থেকে সঞ্চয় বৃদ্ধি করে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে,যা পল্লি উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। তাই পল্লি উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে পল্লি জনগোষ্ঠীর আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা।
১০. গণতান্ত্রিক চেতনা : একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। পল্লি উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা অপরিহার্য।তাই পল্লি উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পল্লির জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গৃহীত কর্মসূচিই পল্লিউন্নয়ন যা একটি দেশের জন্য অপরিহার্য। সরকারি পর্যায়ে যদি উদ্যোগ গ্রহণ ও পরিকল্পনা যথার্থরূপে বাস্তবায়ন করা হয় তবে পল্লিউন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব । ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে এক্ষেত্রে আমরা মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*