Answer

কী জীবন তাহার ছিল, এখন কি হইয়াছে।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ডাকাত সর্দার ভিখুর ফেলে আসা ঘটনাবহুল উদ্দাম জীবন সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : ডাকাত সর্দার ভিখুর অতীতের জীবন ছিল উদ্দাম ও ঘটনাবহুল। যখন সে ডাকাতি করে জীবিকানির্বাহ করতে তখন তাড়ির দোকানে গিয়ে ভাঁড়ে ভাঁড়ে তাড়ি গিলে সে হল্লা করতো। টলতে টলতে বালীর ঘরে গিয়ে উন্মত্ত রাত যাপন করতো। আর মাঝে মাঝে দল বেঁধে গভীর রাতে গৃহস্থের বাড়ি চড়াও হয়ে সকলকে মেরে কেটে টাকা গহনা লুঠ করে রাতারাতি উধাও হয়ে আলোয় সে দৃশ্য দেখার যেত। স্ত্রীর চোখের সামনে স্বামীকে বেঁধে মারলে তার মুখে যে অবর্ণনীয় ভাব দেখা যেত; ছেলের শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলে তার মা যেমন করে আর্তনাদ করে উঠত মশালের আর শোনার চেয়ে উন্মাদনাকর নেশা ভিখুর কাছে জগতে আর ছিল না। পুলিশের ভয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পালিয়ে বেড়িয়ে আর বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে থেকেও তখন যেন সে সুখী ছিল। তার দলের কেউ কেউ বার বার জেল খেটেছে; কিন্তু জীবনে একবারের বেশি পুলিশ তার নাগাল পায়নি। যেবার রাখু বাগদীকে সাথে করে পাহানার শ্রীপতি বিশ্বাসের বোনটাকে সে চুরি করেছিল সেবার সাত বছরের জন্য তার কয়েদ হয়েছিল। কিন্তু দু’বছরের বেশি সরকার তাকে জেলে আটকে রাখতে পারেনি। এক বর্ষার সন্ধ্যায় জেলখানার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে সে পালিয়ে ছিল। তারপর একা সে গৃহস্থ বাড়ির ঘরের বেড়া কেটে চুরি করেছে; দিন দুপুরে পুকুর ঘাটে একাকিনী গৃহস্থ বধূর মুখ চেপে গলার হার হাতের বালা খুলে নিয়েছে। এমন কত কি ভয়ঙ্কর দুষ্কর্ম সে অবলীলায় করে এসেছে যার অনেকগুলোই স্মরণে নেই। অথচ আজ পঙ্গু হয়ে ভিক্ষা করে তাকে জীবন কাটাতে হচ্ছে। তাই ভিখু ভাবে, কী জীবন তার ছিল, আর এখন সে কী হয়েছে !
মন্তব্য : অসহায় ভিখুর অতীত জীবনের স্মৃতি আলোচ্য বাক্যে বেদনা হয়ে ফুটে উঠেছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!