কালের রেঁদার টানে সর্বশিল্প করে থর থর কষ্টকর তার চেয়ে নয় মেয়ে কবির অধর।”— ব্যাখ্যা কর।
উৎস : আলোচ্য অংশটুকু আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথিতযশা কবি আল মাহমুদ বিরচিত ‘সোনালী কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের অন্ত গত ‘সোনালী কাবিন : ৫’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কবি এখানে প্রেমভাবনা ও সময়ের সম্পর্কে তাঁর মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষণ : নাগরিক জীবনের প্রেমভাবনা প্রায় অন্তঃসারশূন্য। কবি এখানে অশরীরী প্রেমভাবনা পাশ কাটিয়ে শরীরী প্রেমে উন্মুখ। বাংলা সাহিত্যের উদ্ভবকালের সাহিত্যে নর-নারীর প্রেমের জোয়ার আমরা দেখতে পাই। প্রাচীন সাহিত্যের শবর-শবরীর উন্মাতাল প্রেমকেলি বর্তমানের নর-নারী অস্বীকার করতে পারে না। প্রেম সবসময় কামাসক্ত। শরীর-বিচ্ছিন্ন প্রেম প্রেম হতে পারে না। তাই কবি শরীরী আবেদন অস্বীকার করতে চাননি। তিনি উপলব্ধি করেছেন পৃথিবীর সবকিছু নশ্বর। বিশাল বিশাল স্থাপত্য কালের স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু আবহমান কাল ধরে নর-নারীর প্রেম অবিনশ্বর। পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই সবকিছু চলে। মূলত প্রেমও তাই দেহও তাই। দেহতো একমাত্র প্রেমেরই আধার। দেহগত শুচিবোধ আমাদের সমাজের অন্তঃমূলে প্রোথিত । শিল্পীর তুলির টানের যেমন সমস্ত শিল্পকর্ম জীবন্ত হয়ে উঠ, থর থর করে কাঁপে, কবির প্রেমসিক্ত অধর তার চেয়ে কম ক্রিয়াশীল নয়। মানুষের প্রেম ভাবনার কাছে যে কোনো শিল্পই তুচ্ছাতিচ্ছ। দৈহিক প্রেম এক উন্নত শিল্পকর্ম।
মন্তব্য : পৃথিবীতে সবকিছুই নশ্বর, একমাত্র প্রেমই অবিনশ্বর।