কাজী নজরুল ইসলামের মানবতাবাদী দর্শন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, মানবতাবাদ সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের মূল্যায়ন কর।
অথবা, মানবতাবাদ সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের অভিমত কী?
অথবা, মানবতাবাদ সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের দর্শন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷। ভূমিকা :
কাজী নজরুল ইসলাম দার্শনিকের চেয়ে কবি হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। আমরা নজরুলের সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে তার জগৎ ও জীবন সম্পর্কিত দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে পারি। তাঁর দার্শনিক চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর বিভিন্ন কাব্য, গান, উপন্যাস ও নাটকে। নজরুল তাঁর চিন্তাভাবনাকে স্বদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তর্জাতিকতায় রূপ দিয়েছেন। তিনি মানবতাবাদের জয়গান গেয়েছেন। বাদ যায়নি ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ, সভ্যতার কোনো দিকই। নজরুলের সাহিত্যকর্মে রয়েছে জীবনদর্শন।
কাজী নজরুল ইসলামের মানবতাবাদী দর্শন : কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক। নিজে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় তিনি উপলব্ধি করেছেন সাধারণের দুঃখ দুর্দশা। আর তাই তিনি সর্বহারাদের জয়গান গেয়েছেন। নিম্নে তার মানবতাবাদী দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সার্বিক মানবতাবাদ : নজরুল বিশেষ শ্রেণির পরিবর্তে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তিনি সকলকে সাথে নিয়ে মানবতাবাদী সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। সকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি দর্শন চর্চায় ব্রতী।হয়েছিলেন। আর তাই তার দর্শনে যে মানবতাবাদের পরিচয় আমরা পাই তাকে বলা হয় সার্বিক মানবতাবাদ ।
২. বিদ্রোহী মানবতাবাদ : নজরুলের অসংখ্য কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও উপন্যাসে বিদ্রোহী মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। যে কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। নজরুলের সকল বিদ্রোহের পিছনে রয়েছে মানবতাবাদ। মানবতার জয়গান গাইতে গিয়েই তিনি শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উড়িয়েছেন। নজরুল নিজেই বলেছেন, “আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি,অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।
৩. ধর্মীয় মানবতাবাদ : নজরুলের মধ্যে কোনো প্রকার ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না; তিনি সকল ধর্মের সকল মানুষের জন্য মুক্তির দিশারী হিসেবে কাজ করেন। মানবতাবাদের বিসর্জন না দিয়ে, আপন সত্তাকে বিসর্জন না দিয়ে, সাধারণ ধর্মীয় পরিকাঠামোয় তিনি বিচরণ করেছেন। তাঁর লেখনীতে তিনি প্রথমে মানুষ, তার পর মুসলিম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
৪. সামাজিক মানবতাবাদ: নজরুল সামাজিক শ্রেণি শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ছিলেন শোষিত শ্রেণির বন্ধু। শাসকের হাত থেকে।শোষিতের মুক্তির কথা বলতে গিয়ে বার বার জেল খেটেছেন, তবুও পিছপা হননি। যখনই মানবতা লাঞ্ছিত হয়েছে তখনই তিনি অসিরূপে কলম তুলে নিয়েছেন শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে। তিনি সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, আগ্রাসনবাদের প্রাচীর ভেঙে মানবতাকে সুদৃঢ় আসনে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, নজরুলের সমগ্র রচনা যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা দেখবো যে তার মধ্যে রয়েছে মানবতার জন্য বিদ্রোহ, সুন্দর ও কল্যাণের বর্ণনা, শোষিতের আত্মচিৎকার এবং নতুনের আহ্বান। নজরুলের লেখনীগুলো ছিল মানুষের দাবি আদায়ের বিপ্লবী স্লোগান। তিনি তার মানবতাবাদী রচনার জন্য অমর হয়ে আছেন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*