এ ম্লান কদর্যের দলে তুমি নও, তুমি বও তোমার শৃঙ্খলমুক্ত পুণ্যচিত্তে জীবন-মৃত্যুর পরিপূর্ণ সুর।”— ব্যাখ্যা কর।
উৎস : আলোচ্য অংশটুকু ইসলামি পুনর্জাগরণের কবি ফররুখ আহমদ রচিত ‘ডাহুক’ কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে ডাহুকের পরিশুদ্ধ জীবন এবং তার একনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে কবি মানবজীবনের গ্লানিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন।
বিশ্লেষণ : স্তব্ধরাতে ডাহুকের সুর-অফুরান সুরা কবিচিত্তে আলোড়ন তুলেছে। রাত জেগে কবি শুনতে থাকেন ডাহুকের ডাক। কবির কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট সে ডাক শুনে কবির মনে হয় তা অশরীরী কোন আত্মার আহ্বান। শৃঙ্খলমুক্ত সে সুর জীবন-মৃত্যুর পার্থক্যকে ঘুচিয়ে দেয়। ডাহুক মুক্ত হৃদয়ের প্রতীক। কোন পাপ পঙ্কিলতা তাকে স্পর্শ করে না। সে তার আদর্শ থেকে কখনো
বিচ্যুত হয় না। লোভ লালসা তাকে কখনো প্রভাবিত করে না। তাই সে এমন অফুরান সুরা বিলিয়ে দিতে পারে। অপরপক্ষে মানুষের পার্থিব জীবন নানা লোভ লালসা হিংসা বিদ্বেষ দ্বারা পরিপূর্ণ। সে কখনো একনিষ্ঠ পরিপূর্ণ হৃদয়ে তার প্রভুকে ডাকতে পারে না। সেজন্য ডাহুকের মতো পরমপাত্রের সাধনায় আত্মলীন হওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। ক্লেদাক্ত কদর্য জীবনভার তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। সে মুক্ত হতে চাইলেও কিছুতেই তার মুক্তি মিলে না। ফলে কেবলই বেদনাবিদ্ধ, গ্লানিবিদ্ধ হওয়া ছাড়া মানুষের আর কোন উপায় থাকে না।
মন্তব্য : কবি আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মুক্তির সঠিক পথটি খুঁজে পেতে চেয়েছেন।