এ দেশে লোকে যে যৌবনের কপালে রাজটিকার পরিবর্তে তার পৃষ্ঠে রাজদণ্ড প্রয়োগ করতে সদাই প্রস্তুত, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : বাংলাদেশের জ্ঞানী ব্যক্তিদের যৌবনের প্রতি যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সে প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : যৌবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যৌবনে পৌঁছেই বিকশিত হয় জীবনের পূর্ণ রূপ। এ সময়েই প্রস্ফুটিত হয় মানুষের সকল সম্ভাবনার কুঁড়ি। মানুষের জীবন প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ঋতুরাজ বসন্তের আবির্ভাবে প্রকৃতির বুকে যেমন দেখা যায় যৌবনের সমারোহ, ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে উঠে যেমন ধরণী তেমনি যৌবনের আগমনে মানবজীবনও বিবিধ পুষ্পসম্ভারে সুন্দর হয়ে উঠে। কিন্তু আমাদের দেশের জ্ঞানী ব্যক্তিরা যৌবনের এ তেজ ও প্রাণচাঞ্চল্য সহ্য করতে পারেন না। তাই জীবনের যৌবন এবং প্রকৃতির যৌবন দুটোকেই তাঁরা মনে করেন অশোভন ও অবিনীত। আর এ দোষেই যৌবন তাঁদের কাছে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়ায়। তারা ব্যগ্র হয়ে পড়েন এ দু’য়ের শাস্তিবিধানে। তাঁরা মনে করেন প্রকৃতি ও জীবনের শক্তি একত্রিত হলে তা হয়ে উঠবে প্রবল শক্তিশালী। তাই এ দুটিকে প্রথমে পৃথক করে পরে শায়েস্তা করতে চান। যৌবন ও বসন্ত এ দু’য়ের আবির্ভাব যে একই দৈবশক্তির লীলা এ বিশ্বাস থেকে তাঁরা মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য সদা ব্যস্ত। তাই তাঁরা যৌবনকে রাজটিকা পরানোর পরিবর্তে তার পৃষ্ঠে রাজদণ্ড প্রয়োগ করতে বেশি উৎসাহী। পণ্ডিতদের এ প্রবণতার কারণে এদেশের প্রায় সকল মানুষই যৌবন ও যুবশক্তির উত্থানের প্রতি বিমুখ হয়ে উঠেছে। যৌবনকে তারা আশীর্বাদ মনে না করে অভিশাপ মনে করছে।
মন্তব্য : কূপমণ্ডূকেরা যৌবনের অসীম শক্তিকে ভয় পায়। তারা এ কারণে যৌবনকে সন্দেহের চোখে দেখে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!