এখানে যখন এলাম—আমি প্রথমে একটা করবী গাছ লাগাই…ফুলের জন্যে নয়, বুড়ো বলল, বিচির জন্যে, বুঝেছ করবী ফুলের বিচির জন্যে।”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ব্যাখ্যাংশটুকু হাসান আজিজুল হক রচিত ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ নামক গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে। আলোচ্য উদ্ধৃতিতে বৃদ্ধের অন্তর্যন্ত্রণাকে তুলে ধরতে গিয়ে করবী বৃক্ষের প্রসঙ্গ এনেছেন। এ গল্পে কেশো-বুড়ো উদ্বাস্তু মানুষ, দেশ-ছাড়া অসহায় এক পিতা। দেশবিভাগ মানুষকে, বাংলার জনসাধারণকে যে-ভাবে বিপন্ন উন্মলিত লাঞ্ছিত করেছে, তারই যেন প্রতীকী রূপ কেশো-বুড়ো। দেশ-ত্যাগের ফলে শূন্য হয়ে গেছে তার ভিতর বাহির- আত্মজাকেও তাই তার কাছে মনে হয়েছে বিষবৃক্ষের বীজ। দেশত্যাগের এই মর্মদাহী যন্ত্রণাকথা উঠে এসেছে কেশো-বুড়োর অন্তর্গত ভাবনায়।সংসার নির্বাহের জন্য কেশো-বুড়ো আত্মজাকে তুলে দিয়েছে ভোগবিলাসী যুবকদের কাছে। রুকু কোনো প্রতিবাদ করেছে কিনা, তার স্বাক্ষর নেই গল্পে। করবী গাছে যে বিচি হয়, তা বিষের আধার, রুকুও তো পিতা কেশো-বুড়োর কাছে চিরায়ত এক বিষকাণ্ড। তাই ঘুরে ঘুরে এ গল্পে আসে করবী গাছের কথা-গল্পের নামকরণ থেকে পরিণতি পর্যন্ত। করবী গাছটাই যে হয়ে উঠে যন্ত্রণার উৎস, ওটাই যে রুকুর মর্মদাহী অস্তিত্ব কেশো-বুড়োর হার্দিক বয়ানে তা উঠে এসেছে ভয়ানকভাবে- …এখানে যখন এলাম—আমি প্রথমে একটা করবী গাছ লাগাই…ফুলের জন্যে নয়, বুড়ো বলল, বিচির জন্যে, বুঝেছ করবী ফুলের বিচির জন্যে।
চমৎকার বিষ হয় করবী ফুলের বিচিতে।’ ‘আত্মজা’ ও ‘করবী গাছ’ বৃদ্ধের জীবনের সমার্থক। সুস্বাদু ফল প্রাপ্তির প্রত্যাশায় মানুষ

বৃক্ষরোপণ করে; এ গল্পের বৃদ্ধ রোপণ করেছে করবী গাছ, যার ফল বহন করে তীব্র তিক্ততা— হলাহল । অতএব বলা যায়, কন্যার সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থে জীবন ধারণে বাধ্য হওয়া, বৃদ্ধের কাছে করবী গাছের বিষময় ফল ভক্ষণের নামান্তর মাত্র—আর এই বিষয়টিই গল্পকার প্রতীকীভাষ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!