এখানে ঘুমের পাড়া স্তব্ধদীঘি অতল সুপ্তির! দীর্ঘ রাত্রি একা জেগে আছি।”- ব্যাখ্যা কর।
উৎস : বক্ষ্যমাণ অংশটুকু ইসলামি ঐতিহ্যের কবি ফররুখ আহমদ রচিত ‘ডাহুক’ কবিতা থেকে চয়িত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে ডাহুকের ডাক শুনে কবি চিত্তে যে ভাবতন্ময়তা সৃষ্টি হয়েছে তার কথা বলা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : গভীর নিস্তব্ধ রাত্রি। সমস্ত প্রকৃতি শীতল নিদ্রায় আচ্ছন্ন। কবি জেগে আছেন একাকী। রাত্রির গভীরতা ভেদ করে ভেসে আসে ডাহুকের ডাক। কবির অন্তর্জগতে শুরু হয় আলোড়ন। এক ভিন্নতর আবেদন কবি হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। ডাহুকের ডাকে কবি খুঁজে পান ভিন্নতর ব্যঞ্জনা। ডাহুকের সুরাস্রোত সুর রাগিনী হয়ে কবিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। কবি যে আদর্শের স্বপ্ন দেখেন তা বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা। ডাহুকের সুরে কবি হৃদয়ের সীমাহীন অপূর্ণতা ও অতৃপ্তির কান্না গুমরে উঠে।. অতৃপ্তি অপ্রাপ্তির বেদনা কবিকে ক্ষতবিক্ষত করে। অবিশ্রান্ত ডেকে যায় ডাহুক। তার ক্লান্তি নেই। অথচ কবি ক্লান্ত। কবি জীবনভর যে আদর্শের অনুধ্যান করেছেন তা বাস্তবায়নে একনিষ্ঠ হতে পারেননি। সামান্য একটি ডাহুক যে একনিষ্ঠতায় প্রেমপাত্র উজাড় করে চলেছে কবি তা পারেন না। কবির এ অবাধতৃপ্তিকে তাঁকে রাত্রি জাগরণে বাধ্য করে। কবি নতুন করে জীবনের হিসাবে নিকাশ মেলাতে থাকেন।
মন্তব্য : ডাহুকের ডাক কবির চেতনালোকে এক চরম সত্যের সন্ধান এনে দিয়েছে। কবি রাত জেগে সে সত্যের আলোকে আত্মানুসন্ধানে ব্যাকুল।