একটি উত্তম প্রশ্নমালা তৈরি করতে কী কী বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত? আলোচনা কর ।

অথবা, প্রশ্নমালা তৈরি করতে কী কী বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, কোন কোন বিষয়গুলো সতর্কতা অবলম্বন করে প্রশ্নমালা তৈরি করতে হয় বিশ্লেষণ কর।
উত্তর ভূমিকা :
সমাজ গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের কৌশল হিসেবে একটি বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো প্রশ্নপত্র । সাধারণত বৃহৎকার সমগ্রহের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী। যেখানে সমাজ গবেষার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ও দার্শনিক পদ্ধতির পাশাপাশি এক পর্যায়ে প্রশ্নমালা বা প্রশ্নপত্র ব্যবহারের উপরও গুরুত্বারোপ করেছিলেন।
উত্তম প্রশ্নমালা তৈরিতে সতর্কতা অবলম্বন : সামাজিক গবেষণার তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রশ্নমালা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রশ্নমালা তৈরির সময় কতকগুলো বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন । একটি উত্তম প্রশ্নমালা তৈরির ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. গবেষণার উদ্দেশ্য : উত্তম প্রশ্নমালা অবশ্যই গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে প্রশ্নমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তা অবশ্যই উত্তম প্রশ্নমালায় উল্লেখ করতে হবে। গবেষণা কি সমস্যা অনুসন্ধান করবে, কি লক্ষ্য অর্জন করবে বা কি অনুমান যাচাই করবে এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রশ্নমালা তৈরি করতে হবে ।
২. সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার : উত্তম প্রশ্নমালায় ভাষা অবশ্যই সহজ-সরল হতে হবে। উত্তরদাতা যাতে সহজে প্রশ্নপত্রের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশ্নমালায় যতদূর সম্ভব টেকনিক্যাল, দ্বার্থ, দুর্বোধ্য ও জটিল শব্দ পরিহার করা উচিত। ননা এসব শব্দের অর্থ বিভিন্ন জনের নিকট বিভিন্ন রকম হয়। ফলে প্রশ্নোত্তর অপ্রাসঙ্গিক তথ্যের সাথে মিশ্রিত হয়ে পড়ে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. প্রশ্নের আকৃতিগত দিক : উত্তম প্রশ্নমালায় প্রশ্নের আকার অবশ্যই ছোট হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ প্রশ্নপত্রে আকার বড় হলে উত্তর দিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। প্রশ্নপত্রের আকার বড় দেখলে অনেক উত্তরদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে নিরুৎসাহবোধ করে । তাই উত্তম প্রশ্নমালা তৈরিতে প্রশ্নের আকার যাতে ছোট হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে ।
৪. ধারাবাহিকতা : উত্তম প্রশ্নমালা তৈরির সময় অবশ্যই প্রশ্নের ধারাবাহিকতা বাজায় রাখা প্রয়োজন। অর্থাৎ কোন প্রশ্নের পর কোন প্রশ্ন থাকবে তা বিশেষ নিয়মে সাজানো উচিত। কেননা প্রশ্নপত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে উত্তরদাতা অনেক সময় বিরক্ত হয় এবং সঠিক উত্তর বের হয়ে আসে না।
৫. ব্যক্তিগত এবং গোপনীয় প্রশ্ন পরিহার : প্রশ্নপত্রে কোন ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয় আছে কি না সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা ব্যক্তিগত ও গোপনীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে উত্তরদাতা উৎসাহ বোধ করেন না । তাই উত্তম প্রশ্নমালায় অবশ্যই ব্যক্তিগত ও গোপনীয় প্রশ্ন পরিহার করতে হবে।
৬. প্রয়োজনীয় নির্দেশনা : উত্তরদাতা যাতে প্রশ্নপত্র সঠিকভাবে পূরণ করতে পারেন সেজন্য প্রশ্নপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সংযোজন করা আবশ্যক। উত্তম প্রশ্নমালায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । তাই প্রশ্নমালায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আছে কি না সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৭. সংবেদনশীলতা : প্রশ্নমালা তৈরির সময় অবশ্যই সংবেদনশীল প্রশ্ন পরিহার করতে হবে। কেননা সংবেদনশীল প্রশ্ন দেখে অনেক সময় উত্তরদাতা রেখে যেতে পারেন। ফলে প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া সম্ভব হয় না এবং গবেষণাও নির্ভুল হয় না । তাই প্রশ্নমালা তৈরির সময় সংবেদনশীলতা পরিহার করা আবশ্যক ।
৮. উত্তরদাতাকে নিশ্চয়তা প্রদান : উত্তম প্রশ্নমালা তৈরিতে উত্তরদাতাকে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। এতে উত্তরদাতাকে এ মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তার প্রদত্ত উত্তরের গোপীনতা রক্ষা করা হবে এবং গবেষণার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এ তথ্য ব্যবহার করা হবে না। এর ফলে উত্তরদাতা নির্ভয়ে উত্তর প্রদানে আগ্রহী হন ।
৯. আবদ্ধ আকৃতির প্রশ্ন : উত্তম প্রশ্নমালায় প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট উত্তর না থাকা অর্থাৎ প্রশ্নগুলো আবদ্ধ প্রকৃতিরই হওয়া বাঞ্ছনীয় । কেননা প্রশ্নপত্রের প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সুনির্দিষ্ট উত্তর থাকলে উত্তরদাতা সহজেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন এবং গবেষণাও নির্ভুল হয় ।
১০. নিরপেক্ষতা : প্রশ্নমালা তৈরির সময় অবশ্যই নিরপেক্ষতা বাজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ উত্তম প্রশ্নমালায় এমন
নিরপেক্ষ প্রশ্ন করতে হবে যেন কোন প্রকার পক্ষপাতদুষ্টতা ছাড়াই উত্তরদাতার পক্ষে উত্তর দেয়া সম্ভব হয়। যেমন-আপনি ধূমপান করেন না, তাই নয় কি? এ প্রশ্নটির নিরপেক্ষ রূপ হবে আপনি কি ধূমপান করেন?
১১. গণনামূলক প্রশ্ন পরিহার : উত্তম প্রশ্নমালায় অবশ্যই গণনামূলক প্রশ্নপত্র পরিহার করতে হবে । যদি হয় তাহলে অনেক সময় গণনা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই প্রশ্নপত্র তৈরির সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে !
১২. উত্তরদাতার কাছে বোধগম্য : প্রশ্নমালা অবশ্যই উত্তরদাতার কাছে বোধগম্য হতে হবে। কেননা উত্তরদাতা যদি প্রশ্ন বুঝতে না পারে তাহলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না । তাই প্রশ্নপত্র তৈরির সময় এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৩. প্রশ্নপত্রের পূর্ব যাচাইকরণ : গবেষণার কাজ পুরোপুরিভাবে শুরু করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য প্রণয়নকৃত প্রশ্নমালাটি বিশেষ এলাকার জন্য উপযুক্ত কি না তা পূর্ব যাচাই করে নিতে হবে। অর্থাৎ উত্তম প্রশ্নমালা অবশ্যই পূর্ব যাচাইকৃত হতে হবে । কেননা পূর্বে যাচাই করলে প্রশ্নপত্রে ভুল থাকলে সেগুলো সংশোধন করা সম্ভব হয় । তাই প্রশ্নপত্র পূর্বে যাচাইকরণ হয়েছে কি না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে ।
১৪. উত্তরের জন্য ফাঁকা স্থান রাখা : উত্তম প্রশ্নমালায় প্রত্যেক উন্মুক্ত প্রশ্নের উত্তর লিখবার উপযোগী পর্যাপ্ত স্থান ফাঁকা রাখা হয়। এতে সহজেই তথ্যকে কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী এবং সারণিবদ্ধকরণ করা যায়। ফলে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সহজ হয়।
১৫. ধন্যবাদসূচক বাক্য : উত্তম প্রশ্নমালার শেষে প্রশ্নের উত্তরদানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য উত্তরদাতার জন্য ধন্যবাদসূচক বাক্য থাকবে ।
মনে উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একটি উত্তম প্রশ্নমালা তৈরির ক্ষেত্রে উপরে আলোচিত বিষয়ের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা প্রশ্নপত্রে যদি উপরে আলোচিত বিষয়গুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় তাহলে উত্তরদাতার কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয় এবং গবেষণাও সঠিক ও সুন্দর হবে না । তাই গবেষণার প্রশ্নপত্র তৈরির সময় উপরে আলোচিত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া একান্ত প্রয়োজন ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*