একটি আদর্শ সারণিবদ্ধকরণে কী কী বিষয়গুলো আবশ্যক?

অথবা, আদর্শ সারণিবদ্ধকরণের কোন কোন বিষয়সমূহ অত্যাবশ্যক।
অথবা, সারণিবদ্ধকরণের প্রণালি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পরিসংখ্যানে গবেষণা কার্য গৃহীত পরীক্ষণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা । আর এ সংগৃহীত তথ্যসমূহকে যথার্থরূপে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সারণিবদ্ধকরণ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সারণিবদ্ধকরণের সাহায্যে অত্যন্ত সহজ ও সরল উপায়ে তালিকার মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন করা সম্ভবপর হয় ।
সারণিবদ্ধকরণ প্রণালি : সারণিবদ্ধকরণ হলো উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত তথ্য বসিয়ে একটি তালিকার মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন । নিম্নে এর প্রণালি আলোচনা করা হলো :
১. তালিকার নম্বর : কোনো বিষয়ের উপর গবেষণা করতে হলে বেশকিছু বিষয়ের উপর তথ্য সংগ্রহ করতে হয় । এক একটি তথ্যবিশ্বের জন্য এক হয়। বিভিন্ন সারণি একসাথে থাকলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই একটি নির্দিষ্ট একটি সারণি নম্বর দিয়ে সাজিয়ে প্রস্তুত করতে রাখা প্রয়োজন ।
২. শিরোনাম : নাম ছাড়া কোনোকিছু নির্দিষ্ট করা বা চিহ্নিত করা অসম্ভব। ঠিক তেমনি শিরোনাম ব্যতীত তালিকার পরিচিতি পাওয়া সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। তথ্যবিশ্বের আকৃতি, প্রকৃতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করেই তালিকা নম্বরের পাশাপাশি এর একটি সুনির্দিষ্ট শিরোনাম থাকা আবশ্যক ।
৩. শীর্ষ টীকা : শিরোনামের নিচে ব্রাকেটে প্রয়োজনীয় যে ক্ষুদ্র বিবৃতি দেওয়া হয় তাকে শীর্ষ টীকা বলে । তবে শীর্ষ টীকা সারণির অপরিহার্য নয় । তবে তথ্যমালার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এটা থাকা প্রয়োজন ।
৪. কলাম শিরোনাম : এ পর্যায়ে তালিকার কলামগুলো সংক্ষিপ্ত পরিচিতি কলামগুলো উপরে খালি স্থানে লেখা হয় । শিরোনামের যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন কলাম শিরোনামের সেসব গুণাবলি থাকা আবশ্যক। যেমন- বাংলাদেশের জনগণকে আর্থসামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে ভাগ করলে শিরোনাম হবে ‘আর্থিক অবস্থা’ ।
৫. কলাম শীর্ষ : তথ্যবিশ্বকে কোনো গুণের ভিত্তিতে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করলে ঐ সকল গুণকে কলামের শীর্ষে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়। আর এটাকে কলাম শীর্ষ লেখা হয়। যেমন- বাংলাদেশের জনগণকে যদি আর্থিক বিবেচনায় বিভক্ত করা হয় তবে এর কলাম শীর্ষ হবে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ইত্যাদি ।
৬. উপকলাম শীর্ষ : প্রতিটি কলামকে আবার দুই বা ততোধিক কলামে বিভক্ত করা যেতে পারে যা উপকলাম নামে পরিচিত । যেসব গুণাবলিতে কলামসমূহ বিভক্ত করা হয় সেগুলো উপকলামে স্থাপিত হয় ।
৭. বক্স হেড : প্রত্যেক কলাম বা উপকলামের অন্তর্ভুক্ত তথ্যসমূহ কোন এককের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তা উপকলামের নিচে একটি ক্ষুদ্র অংশে বক্সের মাঝে লেখা হয়। যাকে বক্স হেড বলে। যেমন- যদি ভর পরিমাপ করা হয়, সেক্ষেত্রে কেজি, পাউন্ড, গ্রাম ইত্যাদি বক্স হেডে সন্নিবেশিত করা হয় ।
৮. প্রধান সারি শিরোনাম : যে বিশেষ উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে তথ্যসমূহ সারিতে বিভক্ত হয় তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রধান কলাম শিরোনামের পাশে লেখা হয়। আর এটাই হলো প্রধান সারি শিরোনাম। যেমন- বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাথাপিছু আয় কত সনে কত ছিল তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে শুধু স্বীয় সন লিখলেই যথেষ্ট হবে।
৯. সারি শিরোনাম : তথ্যের গুরুত্ব অনুসারে তথ্যবিশ্বকে যে কয় ভাগে বিভক্ত করা যায় তার প্রত্যেকটিকে সারি শিরোনাম বলা হয় । সাধারণত তথ্যের সময়ভিত্তিক বা ভৌগোলিক শ্রেণিবিন্যাস করলে যে যে শ্রেণি পাওয়া যায় তা সারি শিরোনাম ।
১০. তালিকার গর্ভাংশ : তালিকার কলাম ও সারিগুলো তৈরি করলে কতকগুলো ঘর পাওয়া যায়। আর এ ঘরগুলো হলো তালিকার গর্ভাংশ । প্রতিটি ঘর একটি সুনির্দিষ্ট কলাম ও সারি শিরোনামের অন্তর্ভুক্ত থাকে ।
১১. পাদটীকা : সারণিতে এমন কিছু বিশেষ তথ্য প্রকাশ করা হয় যা ব্যাখ্যা না করলে বুঝা যায় না। সারণির মধ্যে জায়গার স্বল্পতাহেতু লেখা সম্ভব হয় না। তাই তালিকার নিচে এগুলো একটি বিশেষ চিহ্ন দিয়ে লেখা হয় এবং ব্যাখ্যা দেওয়া হয় । তবে এক্ষেত্রে তারকা (*) চিহ্ন ব্যবহার করা অধিক সমীচীন। যদি একাধিক তথ্য হয় তবে একাধিকবার তারকার সাথে সংখ্যা বসিয়ে উল্লেখ করা যেতে পারে ।
১২. উৎস টীকা : তালিকা প্রস্তুতকারী যদি সন্ধানকারী না হন, তবে তালিকার নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে, তা লিপিবদ্ধ করা হয় । মাধ্যমিক তথ্য থেকে নাকি প্রাইমারি উৎস থেকে সেটা এখানে উল্লেখ করতে হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিসংখ্যানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর মাধ্যমে তথ্যসমূহকে সহজে উপস্থাপন করা যায়। তবে এর কিছু পদ্ধতি বা প্রণালি অনুসরণ করতে বলা যায় যে, সারণিবদ্ধকরণ হয়। যা না করলে সঠিকভাবে তথ্য উপস্থাপন অসম্ভব ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*