উইমেন্স স্টাডিসের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা/উপযোগিতা আলোচনা কর।

অথবা, নারী শিক্ষা কী? নারী শিক্ষার
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের গুরুত্ব আবশ্যকতার বিবরণ দাও।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের প্রয়োজনীয়তা/তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নারী শিক্ষা বলতে কী বুঝ? নারী শিক্ষার গুরুত্ব/উপযোগিতা উল্লেখ কর।
অথবা, নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা/উপযোগিতা সম্পর্কে তুমি না জান বিস্তারিত লেখ।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
নারী অবহেলিত এবং পুরুষনির্ভর। একদেশদর্শী ইতিহাসকে নারী পুরুষের সমদর্শী ইতিহাসে রূপান্তরকরণই উইমেন্স স্টাডিসের বিষয়বস্তু। জ্ঞানের শাখা হিসেবে উইমেন্স স্টাডিসের সংজ্ঞা দেয়া কঠিন। বস্তুত জ্ঞানের কোন শাখার সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই। কারণ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন নাম দেয়া হলেও তারা একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অনুরূপভাবে জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় নারীর অনুপস্থিতি ও নারীর প্রতি অবজ্ঞা অপনোদন করে, উইমেন্স স্টাডিসের জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপূর্ণতা দূর করে নারী ও পুরুষের যথার্থ মূল্যায়নের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গতা বিধান করেছে। উইমেন্স স্টাডিসের আলোচ্যবিষয় তাই নারী ও পুরুষ উভয়ের আলোচনা, যার ফলে জ্ঞানের ক্ষেত্রে অধিকতর সম্পূর্ণতা আসছে।
উইমেন্স স্টাডিসের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা : উইমেন্স স্টাডিসের গুরুত্ব বর্তমান বিশ্বে অনস্বীকার্য। অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, ইতিহাস এক কথায় জ্ঞানের সকল শাখার সাথে উইমেন্স স্টাডিস
ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। নিম্নে উইমেন্স স্টাডিসের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা আলোচনা করা হলো :
১. জ্ঞানের পৃথক শাখা : জ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে উইমেন্স স্টাডিসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নারী ও পুরুষ নিয়ে মানবজাতির সৃষ্টি। কাজেই নারী ও পুরুষ জ্ঞানের সকল শাখার সাথে জড়িত। উইমেন্স স্টাডিস নামে জ্ঞানের পৃথক শাখা খোলা হলে মানবজাতির দু’অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের মধ্যে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হবে। উইমেন্স স্টাডিস বস্তুত বিভেদাত্মক এবং নারী নিয়ে পৃথকভাবে গবেষণা সংকীর্ণমনা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক, যা একটি পাঠ্য বিষয়ের উপজীব্য হতে পারে না।
২. সামাজিক স্বীকৃতি : মানবজাতির অর্ধাংশ নারীকে অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমানে টেনে তুলতে, তাকে যবনিকার অন্তরাল থেকে বাইরে এনে সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করতে উইমেন্স স্টাডিসের আবশ্যকতা মেনে না নিয়ে উপায় নেই। এদিক থেকে বিচার করলে জ্ঞানচর্চায় বিদ্যমান বিভেদাত্মক সংকীর্ণমনতা দূর করে উইমেন্স স্টাডিস জ্ঞানের প্রসারতা ঘটায়।
৩. বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে : অতীতে বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে পুরুষের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। যে কয়েকজন নারী গবেষক ছিলেন তারাও পক্ষপাতের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করেননি। কারণ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই প্রচলিত পক্ষপাতদুষ্ট সমাজব্যবস্থার শিকার, পুরুষের প্রতি পক্ষপাত এবং নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে যে সমাজব্যবস্থা চালু রয়েছে
সেসব সমাজব্যবস্থার গণ্ডির মধ্যে তারা লালিতপালিত হয়েছেন, সমাজের কাছে তারা ঢালাই হয়েছে, ফলে সমাজের সংস্কার তাদের মধ্যে দৃঢ়বদ্ধ হয়ে গেছে।
৪. গবেষণার ক্ষেত্রে : পক্ষপাতদুষ্ট সমাজব্যবস্থার অর্গলে আবদ্ধ পুরুষের পর্যবেক্ষণ, নিরীক্ষণ ও গবেষণা পুরুষের প্রতি পক্ষপাতমূলক উপাত্তের জন্ম দিয়েছে এবং জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার সকল ক্ষেত্র হয়ে পড়েছে পক্ষপাতদুষ্ট এবং নারী বিবর্জিত। এ দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নারী শিক্ষার বিকল্প নেই। সমাজের পুরুষ পক্ষপাত উন্মোচিত করে উইমেন্স স্টাডিস জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও সমদৃষ্টিসম্পন্ন বিচার বিশ্লেষণের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
.৫. নারী পুরুষের আলোচনা : যদিও নাম উইমেন্স স্টাডিস কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারী ও পুরুষ উভয়েরই আলোচনা। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি নারী নিয়ে গবেষণা করতে হলে পুরুষের প্রসঙ্গ এসে পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, ইতিহাসের কথা বলা যায়, নারীর বিরুদ্ধে পক্ষপাত উদ্ঘাটন করতে হলে ইতিহাস পর্যালোচনা আবশ্যক। নারীর বিরুদ্ধে পক্ষপাত বস্তুত পুরুষের প্রতি পক্ষপাত। পুরুষের আলোচনা ছাড়া নারীর বিরুদ্ধে
পক্ষপাতের ইতিহাস উদ্ঘাটন অসম্ভব। নারী শিক্ষা ইতিহাসে নারী ও পুরুষের বিভেদাত্মক অবস্থান উদঘাটন করে ইতিহাসকে পূর্ণতা দান করেছে।
৬. সুষম সমাজ প্রতিষ্ঠায় : নারী পুরুষের সম্পর্ক কিভাবে সুষম সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং সমাজের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি গঠন করতে পারে উইমেন্স স্টাডিস তা নিয়ে গবেষণা করে। জ্ঞানের এ শাখা কেবল নারীর সমস্যা, অধিকার ও দায়িত্ব, তাদের সামাজিক ও জৈবিক ভূমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ প্রসঙ্গে Barbara তাঁর Women and Politics
World Wide (P-2) গ্রন্থে বলেছেন, “The concrete, practical, everyday problems of living, working and living as equal person.” অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ পরস্পরের এক সমান ব্যক্তি হিসেবে জীবনধারণ, কর্মসম্পাদন ও মন আদানপ্রদানের প্রাত্যহিক, বাস্তব ও ব্যবহারিক সমস্যা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারী ও পুরুষের সামাজিক সম্পর্ককে বুঝানোর জন্য কোনো পরিভাষা এত কাল ছিল না। নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য সেক্স শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু নারী পুরুষের যে সম্পর্কের ভিত্তিতে সামাজিক সংগঠনগুলো গড়ে উঠেছে তাকে বুঝানোর কোন শব্দ ছিল না। ইদানীংকালে নারী বিষয়ক গবেষকগণ নারী পুরুষের সামাজিক সম্পর্ককে বুঝাতে জেন্ডার শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কাজেই নারী শিক্ষা শুধু নারী নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্য, বৈষম্যের কারণ এবং বৈষম্য দূরীকরণের উপায় এবং পন্থা নিয়ে গবেষণা করে। অর্থাৎ, উইমেন্স স্টাডিস পুরুষকে বাদ দিয়ে নয়। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের আলোচনা করে, যার ফলশ্রুতিতে জ্ঞানের ক্ষেত্রে অধিকতর সম্পূর্ণতা আসছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*