উইমেন্স স্টাডিসের আলোচ্যবিষয়গুলো কী কী? আলোচনা কর।

অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের বিষয়বস্তুর বিবরণ দাও।
অথবা, কেবল নারী সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কি উইমেন্স স্টাডিসের আলোচনা সীমাবদ্ধ? আলোচনা কর।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিস কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করে? বর্ণনা কর।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের (বিষয়বস্তুর) সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের আলোচনার ক্ষেত্রসমূহ কী কী? বিস্তারিত বিবরণ লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
নারীর জীবন ও কর্মধারা, তার মন ও মানসিকতা, তার চিন্তাভাবনা এবং সমাজ জীবনে, রাষ্ট্রে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে, শিল্প ও সংস্কৃতিতে অর্থাৎ, জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর স্থান ও ভূমিকা উইমেন্স স্টাডিসের অন্তর্ভুক্ত। যদিও নারীর সামাজিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে তবে তা গতি পায় বিংশ শতাব্দীতে। মূলত বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে পাশ্চাত্যে নারীর সার্বিক অবস্থা নিয়ে বৈজ্ঞানিক আলোচনা দ্রুত এগিয়ে চলে। ইতোমধ্যে পাশ্চাত্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে উইমেন্স স্টাডিস একটি সুনির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম হিসেবে গৃহীত হয়েছে। নারী শিক্ষা মানুষ তথা নারী পুরুষ এবং নারী ও পুরুষ নিয়ে গঠিত সমাজকে বিশ্লেষণ করে। নারীর ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অবদান নারী শিক্ষার আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত।
উইমেন্স স্টাডিসের আলোচ্যবিষয়: নারীর সামাজিক অবস্থান জানতে হলে ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে নারী শিক্ষার আলোচনায় এসে যায়। নিম্নে উইমেন্স স্টাডিসের আলোচ্যবিষয়সমূহ বিবৃত হলো :
১. জেন্ডারের মূল ভূমিকা বিশ্লেষণ : অর্থনৈতিক সামাজিক, রাজনৈতিক তথা মানবজীবনের সকল কর্মকাণ্ডে নারী ও পুরুষের তুলনামূলক অংশগ্রহণ কেমন হবে, তা নির্ধারণে জেন্ডারের মূল ভূমিকা বিশ্লেষণ উইমেল স্টাডিসের আওতাভুক্ত। এ প্রসঙ্গে জ্ঞানের এ শাখা জীবনের সকল ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্যের কারণ, গতিপ্রকৃতি, ব্যাপকতা এবং বিভিন্ন রূপ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে এবং এগুলোর যুক্তিহীনতা, অসারতা ও অস্বাভাবিকতা নির্দেশ করে।
২. জেন্ডার অসমতা : উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জেন্ডার অসমতা উইমেন্স স্টাডিসে প্রেরণা যুগিয়েছে। কাজেই আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জেতারের ভূমিকা জ্ঞানের এ শাখার গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যবিষয়। উইমেন্স স্টাডিস বিভিন্ন শ্রেণির নারীর উপর উন্নয়। কোশল, নীতি এবং বাস্তবায়নের উপকরণগুলোর প্রতিফল বিশ্লেষণ এবং উন্নয়নে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার উপায় বা পন্থা উদ্ভাবন করে।
৩. জেন্ডারের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা পর্যালোচনা করা : উইমেন্স স্টাডিসের অন্যতম আলোচ্যবিষয় জেন্ডারের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে পর্যালোচনা করে থাকে। উইমেন্স স্টাডিসের শিল্পায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি, জাতীয় শ্রমশক্তি, শ্রমবিভাগ প্রভৃতি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জেন্ডারের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা পর্যালোচনা করে। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জেন্ডারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
৪. নারীর ক্ষমতাহীনতা : নারী শিক্ষার অন্যতম আলোচ্যবিষয় হলো নারীর ক্ষমতাহীনতা। পুরুষ প্রাধান্য ও নারীর ক্ষমতাহীন অধস্তন অবস্থা বিশ্বজুড়ে নারীনির্যাতন প্রকট ও মারাত্মক করে তুলেছে। নারী নির্যাতনের মূলে রয়েছে নারীর ক্ষমতাহীনতা। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ উইমেন্স স্টাডিসের সর্বপ্রধান লক্ষ্য ও অভীষ্ট। পুরুষের বাধা অগ্রাহ্য করে স্বীয় ইচ্ছা পূরণ করা নারীর পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। কাজেই পিতৃতন্ত্রে পুরুষ ক্ষমতার অধিকারী এবং নারী তাহীন।
৫. নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন : উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণের যে পদ্ধতিগুলো আছে, একুশ শতকের সূচনালগ্নে এ কর্মসূচিগুলো কোন স্তরের পদ্ধতিতে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তা লক্ষণীয়। আমরা যদি IIRD এর কর্মসূচি লক্ষ্য করি, তবে দেখা যাবে এখানে লিঙ্গভিত্তিক শ্রম বিভাজন বা ভিন্ন পরিমণ্ডলের ধারণা তীব্রভাবে বিরাজমান। একইভাবে CARE এর EMP তে কর্মরত নারীরা অভিযোগ এনেছেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের দ্বারা যৌন হয়রানি ও অর্থ প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগে
৬. যৌনতা : উইমেন্স স্টাডিস যৌনতাকে আলোচনার বিষয়বস্তু করে নিয়েছে। সাহিত্য, বিজ্ঞাপন, গণমাধ্যম, সিনেমা, টেলিভিশনে নারী ও পুরুষের পৃথক ভাবমূর্তি জ্ঞানের এ শাখার আলোচ্যবিষয়। নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গে যৌন হয়রানি বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে। কারণ ইদানীং নারীরা অধিক সংখ্যায় কর্মগ্রহণ করায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসায়
যৌন হয়রানি কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
৭. আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে : আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জেন্ডারের ভূমিকা ও অবস্থান উইমেন্স স্টাডিসের আলোচ্যবিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বায়ন, আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, ক্ষমতার মেরুকরণ, বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি, পরাশক্তির খবরদারি, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সংঘাত ও সন্ত্রাস বিশ্বজুড়ে যে সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে জ্ঞানের এ শাখা তার জেন্ডার চরিত্র বিশ্লেষণ করে।
৮. নারী আন্দোলন : উইমেন্স স্টাডিসের অন্যতম প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো নারী আন্দোলন। নারী আন্দোলন থেকেই উইমেন্স স্টাডিসের জন্ম। বিশ্ব জুড়ে নারী আন্দোলন, নারী গোষ্ঠী, নারী সংগঠনগুলোর সংগ্রামকে যুগপৎ সমর্থন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিকল্প পদ্ধতি, নীতি ও কৌশল উদ্ভাবন ও তাদের তুলনামূলক কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা উইমেন্স স্টাডিসের অন্যতম লক্ষ্য। বিভিন্ন অসুবিধা দূর করার উদ্দেশ্যে কেউ কেউ অংশগ্রহণ গবেষণার সাথে কার্যক্রম গবেষণার সমন্বয়ের কথা বলেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় নারীর অনুপস্থিতি ও নারীর প্রতি অবজ্ঞা অপনোদন করে উইমেন্স স্টাডিস জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপূর্ণতা দূর করে নারী ও পুরুষের যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গতা বিধান করেছে। উইমেন্স স্টাডিস তাই নারী ও পুরুষ উভয়ের আলোচনা করে, যার ফলে জ্ঞানের ক্ষেত্রে অধিকতর সম্পূর্ণতা আসছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে যেমন বৈষম্য আছে, তেমনি বিভিন্ন নরগোষ্ঠী বর্ণ ও শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। নরগোষ্ঠী, বর্ণ, শ্রেণি ও নারী পুরুষ বৈষম্য আলোচনা ব্যতিরেকে জ্ঞানচর্চা একপেশে হয়ে পড়ে। কাজেই উইমেন্স স্টাডিস শুধু নারী নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্য, বৈষম্যের কারণ এবং বৈষম্য দূরীকরণের উপায় বা পন্থা নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*