অথবা, ইসলাম ধর্ম নারীকে কী কী অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে আলোচনা কর।
অথবা, ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে? আলোচনা কর।
অথবা, ইসলাম অনুসারে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নারীর সার্বিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম ধর্মের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : যে যুগে কোন সমাজব্যবস্থায়, কোন সম্প্রদায়ে, বধূ, মাতা, ভগ্নি তথা নারীসমাজের কোন অধিকার ছিল না, যে দেশে কন্যার জন্মলাভ ভাগ্যহীনা, কুলক্ষ্মী, অপমানের কারণ বলে গণ্য করা হতো, সে যুগে, সে দেশে জন্মগ্রহণ করে তিনি নারীসমাজকে যথাযথ অধিকার দান করেছিলেন আর তা এমন অধিকার, যা বিংশ শতাব্দীর সভ্য সমাজে অনিচ্ছুক পুরুষের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হয়। তিনি মানবতার কৃতজ্ঞতাভাজন হযরত মুহাম্মদ (স)। যদি আর কিছুই না করতেন, তবু শুধু এজন্যেই মানুষের কল্যাণসাধনকারীরূপে তাঁর স্থান হতো অবিসংবাদী। হযরত আলী
(রা) পুণ্যবতী নারীকে ইহকালীন কল্যাণ, ‘হাসানাতুত দুনিয়া’ বলেছেন।
ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা : নারী জাতিকে এসব দুর্দশা ও হীন অবস্থা থেকে মুক্ত করে সমাজের বুকে তাদের যথোপযুক্ত মান মর্যাদা, অস্তিত্ব, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী জাতির সার্বিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম কি ধরনের ভূমিকা পালন করেছে, নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. মা হিসেবে নারীর মর্যাদা : ইসলাম মা হিসেবে নারী জাতিকে প্রভূত সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। আল্লাহপাক তাঁর আনুগত্যের পরই মায়ের প্রতি ইহসান ও আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। সন্তানের প্রতি মাতাপিতার অপরিসীম হে, বাৎসল্য ও ত্যাগ বিশেষত মাতার দুঃসহ যাতনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, “আমি তো মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি।” সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে নবী (স) বলেছেন, উভয়জন (পিতামাতা) তোমার বেহেশত ও দোজখ । অপর একখানা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “মায়ের চরণতলে সন্তানের বেহেশত।” প্রত্যেক মা একাধারে গর্ভধারিণী, স্তন্যদানকারী, প্রতিপালনকারিণী, সেবিকা, শিক্ষিকা, অভিভাবিকা ইত্যাদি
বহুমুখী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন বলে ইসলাম কোন কোন ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দান করে সম্মানিত করেছে।
২. স্ত্রী হিসেবে নারী : পারিবারিক জীবনে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের ভূমিকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজনকে ছাড়া আরেক জন অসম্পূর্ণ। ইসলাম তাই নারীকে নরের সমান মর্যাদা দান করেছে। স্ত্রী স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী, জীবনসঙ্গিনী ও সহধর্মিণী । সুতরাং স্বামী স্ত্রীকে তার জীবনের প্রিয়তম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে এবং সুখশান্তি ও আনন্দে সম অধিকার দান করবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কালামে পাকে ইরশাদ করেন, তারা (নারীরা) তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।
৩. গৃহের শাসক হিসেবে নারী : পুরুষ যেমন বহির্জগতের ক্রিয়াকর্মের শাসক, নারী তেমনি গৃহের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে শাসক। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স) বলেছেন, “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম এবং আমি আমার পরিবারের নিকট সর্বোত্তম।”
৪. কন্যা হিসেবে নারীর মর্যাদা : কন্যা হিসেবে নারীর মর্যাদাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ক. কন্যা হত্যার চিরাবসান: অজ্ঞতার যুগে আরব দেশে কন্যাসন্তানদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো। কন্যা হত্যা চিরতরে রোধকল্পে মানবতাবাদী মহানবী (স) একদিকে ভীতি, অন্যদিকে সুসংবাদ প্রদান করে বলেছেন, “যে কন্যাসন্ত নিকে হত্যা করবে, সে চির জাহান্নামী হবে। পক্ষান্তরে, যে সন্তুষ্টচিত্তে কন্যাকে আদর যত্ন করে প্রতিপালন করবে, সে চির জান্নাতী হবে।”
খ. কন্যাকে গ্লানি হতে মুক্তি দান : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, “দারিদ্র্যের জন্য তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি।” মহানবী (স) বলেছেন,“তোমার কন্যা যখন তোমার কাছে ফিরে আসে এবং তুমি ছাড়া তার আর কোন উপার্জনকারী না থাকে, তাকে ভরণপোষণ করাই তোমার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সদকা।”
৫. শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা : ইসলাম নারীকে শুধু পুরুষের সমমানের জ্ঞানার্জন করতে বলেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং জ্ঞানার্জনের জন্য বাধ্যতা আরোপ করে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক নরনারীর উপর বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।” জননীর শিক্ষা ছাড়া সন্তানের সার্বিক উন্নতি অসম্ভব। শিক্ষার বলেই যুগে যুগে বহুক্ষেত্রে বহু নারীকে পুরুষের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান বলে ইসলাম ঘোষণা করেছে। অনেক সাহাবী ও তাবেয়ী হযরত আয়েশা (রা) এর কাছ হতে হাদিস, তফসির, ফিকহ শিক্ষা গ্রহণ করতে আসতেন। তাঁরই আদর্শ অনুসরণ করে আজকের নারীরা জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, চিকিৎসা ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছেন।
৬. বৈবাহিক ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা : ইসলাম নারীকে তার স্বামী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। তবে শান্তিশৃঙ্খলার জন্য অভিভাবকের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু কোন প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানী মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় তার উপর কোন প্রকার জোর খাটাতে পারবে না। যেমন হুজুর (স) বলেছেন, “বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবক অপেক্ষা
প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের মতামতের গুরুত্বই বেশি।
ক. তালাকে নারীর অধিকার : মানুষের জীবন সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় করাই বিবাহের উদ্দেশ্য। কিন্তু ঘটনাচক্রে যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সে শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব না হয় তাহলে ইসলামে তালাকের মাধ্যমে এ অশান্তিময় দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটানোর ব্যবস্থা আছে। ইসলামি অনুশাসন অনুযায়ী পুরুষের ন্যায় নারীও তার স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারে।
খ. বিধবা নারীর মর্যাদা : পবিত্র কুরআনের বিধান অনুযায়ী মুসলিম বিধবা নারীগণ স্বামীর সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয়। প্রয়োজনে বিধবাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে ইসলাম নারী জাতির চাওয়া পাওয়ার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম নারী জাতিকে এতই সম্মান ও মর্যাদা দান করেছে যে, পবিত্র কুরআনের সূরা ‘নিসা’ অর্থাৎ, ‘নারী’ এবং ‘মরিয়ম’ নামে দু’খানা সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার উল্লেখ ও তার সমাধান দিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত সকল নির্যাতিতা, লাঞ্ছিতা নারীর ইজ্জত রক্ষা ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দৃষ্টান্ত হয়েছে। হযরত খাদিজা (রা) বলেছেন, আমি রাসূল (স) কে সমস্ত জীবনে মাত্র তিনবার সালাম দেয়ার সুযোগ পেয়েছি, কেননা তিনিই প্রথমে সালাম দিতেন। তাই বলবো যে, “Islam was probably the greatest champion of women’s rights the world has ever seen.”
Leave a Reply