ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আলোকে নারীর ক্ষমতায়ন মূল্যায়ন কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে স্ব-বিস্তারিত লিখ।
অথবা, ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু? বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যে দেশ শুধু অনুন্নতই নয়, যেখানে নারীরা শত বাধানিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ, সেখানে তাদের ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে ইউ. পি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, জনসভা করা এবং হাতে পোস্টার, প্লাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিল করা সত্যিই অবাক করা কাণ্ড। কিন্তু এ অবাক করা কাণ্ডটিই এখন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশে নারী এবং পুরুষের অবস্থানটি বৈষম্যপূর্ণ। সমাজে নারীদের অবস্থান পুরুষের তুলনায় নিম্নস্তরে রয়েছে। এ ধরনের একটি সামাজিক কাঠামোয় ইউনিয়ন পরিষদের এ নির্বাচন নারীদের কাছে অনেক বড় একটি প্রত্যাশার প্রাপ্তি । ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আমাদের জানতে হবে ক্ষমতায়ন বলতে কি বুঝায়।
ইউনিয়ন পরিষদে নারীর অংশগ্রহণ : তৃণমূল পর্যায়ে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের যে অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব তাতে নারীর ক্ষমতায়নের পথে আমরা যে অনেকটা এগিয়ে গেছি, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে ৯৭ সালের তুলনায় ২০০১ সালের নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা কমলেও একথা বলা যায়, যথার্থ ক্ষমতায়নে সম্পূর্ণ সফল না হলেও অগ্রগতি নিঃসন্দেহে হচ্ছে।
মহিলা সদস্যদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি : ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যে কার্যবিধি বা দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তাতে মহিলা ও পুরুষ সদস্যদের কাজের মধ্যে কোনো তফাত নেই। অর্থাৎ সকল কাজই পুরুষ সদস্যদের মতো মহিলা সদস্যরাও করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে মহিলা সদস্যগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে পারছেন তা তাদের জ্ঞান, সচেতনতা, বুদ্ধিমত্তা ও যোগ্যতার উপর নির্ভর করছে। মোটকথা, যেটা একান্তভাবে দরকার সেটা হলো, পুরুষ সদস্য কর্তৃক মহিলা সদস্যদেরকে সহযোগিতা করার মনোবৃত্তি এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি।
ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ক্ষমতায়নের বর্তমান অবস্থা : রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হলো নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান একটি নির্ধারণকারী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই জরুরি একটা বিষয়। ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনে পদক্ষেপ। নারীর নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং জনগণের সাথে নানা কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ নীতি
সরাসরি নির্বাচনের সময় মহিলারা মনে করেছিলেন, এ নির্বাচন হবে নারীর ক্ষমতায়নের একটি অন্যতম উপায়। নারীরা মনে করেছিলেন, এ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে একজন পুরুষ সদস্যর সমকক্ষ হয়ে তাদের মতোই সকল কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, নারী সদস্য তার এলাকার মহিলাদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু নির্বাচনের পর এর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ইউ. পি পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পুরুষ সদস্যরা নারীদের তেমন গুরুত্বই দেয়নি, তাদেরকে তেমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তুলনামূলকভাবে যে কাজগুলোতে ক্ষমতায়নের সুযোগ কম, সে কাজগুলো দেয়া হয়েছে নারীকে। অর্থ সংক্রান্ত কাজগুলো নারী সদস্যদেরকে দেয়া হয়নি। সরকার কর্তৃক
যেহেতু ইউ. পি পরিষদে নারী সদস্যদের দায়িত্ব যথাযথভাবে বর্ণনা করা হয়নি, তাই তাদেরকে অধিকাংশ সময়েই চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যদের আজ্ঞাধীন হয়ে নিম্নের দায়িত্বগুলো পালনে বাধ্য হয়।
১. শিক্ষা বিষয়ক, ২. মহিলা বিষয়ক, ৩. পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক এবং ৪. মা ও শিশু বিষয়ক।
কর্মতৎপরতার বর্তমান অবস্থা : সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উদ্যোগ (এ. আর. ডি) ইউ. এস. এ. আই. ডির অর্থায়নে পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ইউ. পি পর্যায়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীকরণের জন্য জনগণের মতামত জানতে দেশের ৬টি বিভাগে ও জেলার ৩ হাজার পরিবারের উপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে ৯৬টি
সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। শুধুমাত্র নারী উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন করা হয় যে, ইউনিয়ন পরিষদে নারী প্রতিনিধিত্ব থাকায় নারীরা উপকৃত হয়েছেন কি না? উত্তরে শতকরা ৪৮.৫ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন ‘না’ ৪৪ ভাগ ‘হ্যা’ এবং ৭৪.৪ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন ‘জানা নেই’। ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যের কাছ থেকে জনগণ কেমন পদক্ষেপ আশা করেন? এ প্রশ্নের জবাবে উত্তরদাতাদের ৮২.১ ভাগ বলেছেন, ‘বিপদগ্রস্ত মহিলাদের সাহায্য করার কথা’ ৪৯.৩ ভাগ বলেছেন, ‘সাধারণ মহিলাদের সাথে যোগাযোগ’ ৩৮.৬ ভাগ বলেছেন, ‘সচেতনতা সৃষ্টি’ ৩২.৬ ভাগ ‘ক্ষুদ্র ঋণ’ ১৪.৯ ভাগ ‘সালিশ’ এবং ১৭.৮ ভাগ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের কথা বলেছেন। অবশ্য উত্তরদাতাদের যারা শিক্ষিত এবং আর্থসামাজিকভাবে উঁচু স্তরের তারা ইউ. পি দায়িত্ব পালনে মহিলাদের কার্যকারিতার বিষয়টিকে অপেক্ষাকৃত ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছেন। [সূত্র : জনকণ্ঠ পাক্ষিক, ৭–২১ আগস্ট, ২০০৩]
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অবস্থান : ‘বেইজিং প্লাস ফাইভ’ সংক্রান্ত NGO কোয়ালিশন (এন. সি. পি. পি) ২০০২ সালে সাতক্ষীরার মহিলা ইউ. পি সদস্যদের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা যায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে কম, মাত্র ১৭ ভাগ। এর মধ্যে আছে-
১. স্থানীয় সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো ও ব্যবহার।
২. ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন পর্যালোচনা এবং
৩. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ক প্রকল্প। এছাড়া ইজারা, টোল, সড়ক তৈরি বা রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের অর্থ সংক্রান্ত
ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়া হয় না এবং অংশগ্রহণও খুবই কম।
ক্ষমতা চর্চার ক্ষেত্রে বাধাসমূহ : শতকরা ১০০ ভাগ নারী সদস্য তিনটি উদ্বেগজনক সমস্যার কথা বলেছেন। এ
সমস্যাগুলো হলো :
১. নারী সদস্যদের প্রশাসনিক কর্ম পরিধি নির্দিষ্ট না হওয়া।
২. নারী পুরুষের কর্ম বিভাজন না হওয়া।
৩. নারী সদস্যদের গুরুত্বহীন মনে করা ।
[সূত্র : জনকণ্ঠ পাক্ষিক, ৭-২১ আগস্ট, ২০০৩]
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ক্ষমতায়ন নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অতীতে অনেক ভালো উদ্যোগই উদাসীনতা, অমনোযোগিতা বা রাজনৈতিক জটিলতার কারণে সফলতার মুখ দেখতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়নের
যে দাবি এবং তা বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ তার অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে যদি স্থানীয় প্রশাসনে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। তাই এক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাবলির সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি এ বিষয়টিকে শুধুমাত্র নারীর বিষয় নয়, বরং সমাজের সকল সদস্যের উপর অর্পিত নৈতিক দায়িত্ব মনে করে ইউ. পিতে নারী যেন তার যথাযথ ক্ষমতায়নে সফল হতে পারে, সেজন্য সরকারের পাশপাশি জনগণের আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ইউনিয়ন পরিষদে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*