আইন ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান নির্ণয় কর।
অথবা, আইন ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আইন ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান উল্লেখ কর।
অথবা, আইন ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান বর্ণনা কর।
অথবা, আইন ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান তুলে ধর।
অথবা, আইন ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের নারীরা পৃথক কোন শ্রেণি নয়, বরং গোটা মানবজাতিরই একটা উল্লেখযোগ্য অংশ। কিন্তু মানব জাতির এ উল্লেখযোগ্য অংশ ঐতিহাসিকভাবেই নানা ধরনের শোষণ-নিপীড়নের শিকার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণেই নারীরা পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পশ্চাৎপদ । নিম্নে আইন ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান বর্ণনা করা হলো :
নারীর আইনগত অবস্থান : বাংলাদেশের আইনগত কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এখানে নারীর অবস্থানকে প্রান্তিক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। আইনে নারীকে প্রজনন পূর্ণ ব্যক্তি বা পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা থেকে দূরে রেখে সমাজে নারীর অধস্তনতাকে আরও বেশি সুদৃঢ় করা হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এদেশে যে নাগরিক আইন ও ধর্ম, বর্ণ, নিয়মের ভিত্তিতে প্রচলিত যে ব্যক্তিক আইন প্রচলিত আছে সেগুলোকে নারীর মর্যাদা পুরুষের চেয়ে নিম্নতর। ব্যক্তিক আইন বা পারিবারিক আইনের মধ্যে রয়েছে বিবাহ। বিবাহবিচ্ছেদ, বহুবিবাহ দেনমোহর, ভরণপোষণ। অভিভাবকত্ব ও সন্তান লালন-পালন, উত্তরাধিকার ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রধানত ৪ ধরনের ব্যক্তিক
আইন প্রচলিত রয়েছে। যথা : (১) মুসলিম পারিবারিক আইন। (২) হিন্দু পারিবারিক আইন। (৩) বৌদ্ধ গারিবারিক আইন। (৪) খ্রিস্টান পারিবারিক আইন।
নারীর রাজনৈতিক অধিকার : রাজনৈতিক অধিকার বা মর্যাদা বলতে রাষ্ট্রীয় কার্যে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ- সুবিধাকে বুঝায়। নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব অধিকার ভোগ করে, সেগুলো হলো রাজনৈতিক অধিকার। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। এ দেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমান রাজনৈতিক ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে নারী-পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা আসেনি। ভোটের অধিকার, সমিতি ও সংস্থার অধিকার, প্রতিনিধি হওয়ার অধিকার এতে স্বীকৃত হয়েছে। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের নারী সম্প্রদায় সকল রাজনৈতিক অধিকার পূর্ণভাবে পাচ্ছে না, রাজনীতির সর্বত্রই নারীর অবস্থান সার্বিক অধস্তনতার সূচক। কতিপয় সাহসী নারী রাজনীতির মাধ্যমে শীর্ষ পর্যায়ে উঠে এলেও বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক নারীর কোন রাজনৈতিক মর্যাদা ও অবস্থান নেই।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিভিন্ন পারিবারিক, ব্যক্তিক ও ধর্মীয় আইনে নারীদের পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে রাখা হয়েছে। রাজনীতিতেও নারীদের মর্যাদা ও অবস্থান পুরুষের তুলনায় একেবারেই পশ্চাৎপদ। সর্বক্ষেত্রেই নারীরা মর্যাদা ও অধিকার ভোগে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।